বন্দবিলা বিজয় চন্দ্র রায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রাক্তন বৃহত্তর যশোর জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়ের সাথে জড়িয়ে আছে বৃটিশ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলন এবং অহিংস আন্দোলনের ইতিহাস। বৃটিশ ভারতের তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা বাবু বিজয় চন্দ্র রায় তাঁর একমাত্র ছোটভাই বাবু বসন্ত কুমার রায় এবং স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের নিয়ে বন্দবিলা ইউনিয়ন বাসীর (বর্তমান জহুরপুর এবং বন্দবিলা ইউনিয়ন) শিক্ষার জন্য বন্দবিলা ইউনিয়ন ইন্টিটিউশন নামে ১৯৩৯সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়ের জন্য বাবু বিজয় চন্দ্র রায় তাঁর একমাত্র ছোট ভাই বাবু কুমার বসন্ত রায় কে নিয়ে ১৯৪১ সালের ০৮ ডিসেম্বর তারিখে বিদ্যালয়ের নামে বন্দবিলা ও কঠুরাকান্দি মৌজা থেকে তিন দাগে মোট ১ একর ৪০ শতক জমি দান করেন।তাঁর জীবদ্দশায় বিদ্যালয়ের নামটি তাঁর নামে করতে চাইলেউ তিনি সে প্রস্তাব বিনয়ের সাথে প্রত্যাখান করেন। তাঁর মৃত্যুর পরে স্থানীয় জনগণের ইচ্ছায় বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ বিদ্যালয়ের নামটি বন্দবিলা বিজয় চন্দ্র রায় বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসাবে নামকরণ করা হয়।
বাবু বিজয় চন্দ্র রায় বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকার কারণে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে পাকিস্থান সৃষ্টি হলে পাকিস্থানী আমলে বিদ্যালয়টি প্রথমে জুনিয়র বিদ্যালয় এবং পরবর্তীতে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। বর্তমান মোট সম্পত্তির পরিমান প্রায় ২২ একর। বিদ্যালয়ের ছাত্র ছ্রাত্রীদের জন্য রয়েছে খেলাম মাঠ, সাতার শেখার জন্য রয়েছে পুকুর এবং জ্ঞান তৃষ্ণা নিবারণের জন্য রয়েছে একটি নয়নাভিরাম পাঠাগার।যেটা একসময় ছিলো একটি পরিত্যক্ত বিল্ডিং সেটি বাঘারপাড়ার সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব তানিয়া আফরোজ স্থানীয় সংসদ সদস্য বাবু রণজিত কুমার রায়ের সহযোগিতায় গণপাঠাগার হিসাবে গড়ে তোলেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সহ অত্র এলাকার জনগন তাদের চাহিদা অনুযায়ি জ্ঞান তৃষ্ণা নিবারণ করেন।
বর্তমানে বিদ্যালয়ের আশে পাশে অনেকগুলি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন প্রায় আটটি গ্রামের শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। বর্তমান বিদ্যালয়ে সাড়ে তিনশর উপরে ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করে।
বিদ্যলয়ের দুটি দ্বিতল ভবণ ও একটি আলাদা মনোমুগদ্ধকর পাঠা্গার রয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার শেখার জন্য রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু কর্নার। তাছাড়া রয়েছে শেখ রাসেল কর্নার। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে পৃথক ওয়াশব্লক। তাছাড়া ছাত্রীদের জন্য রয়েছে কমনরুম, কমনরুম সংলগ্ন বাথরুম এবং স্যনিটারি কর্নার।বিদ্যালয়ের সামনে ভাষা শহিদদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি সুন্দর শহিদ মিনার। শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক মেধা বিকাশের জন্য এবং বিভিন্ন অভ্যন্তরীন অনুষ্ঠান করার জন্য রয়েছে বৃহৎ হলরুম।
অন্ধকারাচ্ছন্ন ভারতীয় উপমহাদেশের দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক শাসন-শোষন ছাড়াও নানাবিধ কারনে শিক্ষা,বিজ্ঞান অর্থনীতি,সমাজনীতি তথা সবক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা এ অঞলেরকে একটি আলোকিত জীবন দেওয়ার লক্ষ্যে জনপদের শিক্ষাবঞ্চিত মানুষের শিক্ষার জন্য বন্দবিলা ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন নামে ১৯৩৯ সালে বিদ্যালয়টি গড়েওঠে। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবশ্রেণির মানুষের শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন অহিংস আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক বাবু বিজয় চন্দ্র রায়। শিক্ষা বিস্তারের সাথে সাথে মানবিক গুণ সম্পন্ন দেশপ্রেমী সৎ মেধাবী নাগরিক তৈরির জন্য বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। তাছাড়া পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন,জ্ঞান নির্ভর সমাজ প্রতিষ্ঠা, আত্মনির্ভর জাতি গঠন এবং বৃটিশ পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠার দেশপ্রেমী নাগরিক তৈরীর জন্য বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।
Scroll to Top